Breaking News
Home / টিপস এন্ড ট্রিক্স / শিশুর হাতে স্মার্টফোন এবং এর ভয়াবহতা

শিশুর হাতে স্মার্টফোন এবং এর ভয়াবহতা

অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দীন খালেদ : বিশ্বব্যাপী একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য মোবাইল ফোন আমাদের জন্য এখন অত্যাবশ্যকীয়, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি মনে করি মোবাইলের ব্যবহার শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই। কিন্তু এ মোবাইল প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিজ্ঞানের কল্যাণে নিত্য নতুন স্মার্টফোনের আবিষ্কার। স্মার্টফোনের কল্যাণে শিশুদেরকে শান্ত রাখা, খাওয়ানো, এমনকি বর্ণমালা ও ছড়া শেখানোর কাজটিও বাবা-মায়ের জন্য অনেক সহজ ও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। বিপরীতে স্মার্টফোনের উপর নির্ভরতা বাড়ছে শিশুদের।

নগরায়ন ও শিল্পায়নের এই যুগে এসে আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে অনেক বাবা-মা’ই শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না। নিজেদের অনুপস্থিতির সময়টাতে শিশুকে শান্ত রাখতে তাই অনেকেই মোবাইল ফোনের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ভবিষ্যতে কী হবে ভেবে দেখা হচ্ছে না। ফলে বাবা-মার প্রতি, ভাইবোনের প্রতি ইমোশন কমে যাচ্ছে।

এখনকার শিশুরা প্রযুক্তিপণ্যে এতটাই আসক্ত হয়ে যাচ্ছে যে, শিশুর হাত থেকে মোবাইল ফোন বা ট্যাব কেড়ে নিলে তারা রেগে যায় বা নেতিবাচক আচরণ শুরু করে। তারা অন্য কোনো দিকে খেয়াল করে না, কারও সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। তারা মোবাইল, ট্যাব এ চোখ রাখে বেশি সময়। এতে পারিবারিক বন্ধনের ধারণায় পরিবর্তন আসছে। ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন যার মধ্যে একই সাথে গান, গেমস, কার্টুন, ফানি ভিডিওসহ শিশুদের পছন্দনীয় প্রায় সব কিছুই আছে।

শিশুর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ার আগে ইন্টারনেটে নিরাপত্তার বিষয়টি অভিভাবককে ভেবে দেখতে হবে। এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা মোবাইল ফোন কী জিনিস তা বোঝার কথা না। অভিভাবকরা তাদের হাতে মোবাইল ফোন- স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। অনেক বাবা-মা ক্রেডিট মনে করে বলেন, আমার বাচ্চা ডাউনলোড করতে পারে। কিন্তু বুঝতে পারেন না বাচ্চাটা কোনদিকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানের অগ্রগতির দিনে ইন্টারনেট তথা তথ্যপ্রযুক্তি থাকবেই। একে এড়িয়ে জীবন চলার কোনো উপায় নেই। তবে এ কথা ঠিক যে, জীবনের প্রয়োজনে বিজ্ঞানের অবদান থেকে এই শিশু-কিশোররা কতটুকু গ্রহণ করতে পারছে। স্বাধীনতা দিতে গিয়ে তা যেনো মাত্রাতিরিক্ত না হয় এই ব্যাপারটা প্রতিটি অভিভাবকেরই বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। শিশুর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ার আগে তাই তার বয়স উপযোগী মোবাইল ফোন পছন্দ করতে হবে। অন্তত কৈশোরকালীন সময়টায় মোবাইল ফোন খুব দরকার না, না দেয়াই ভালো।

ডাক্তারি গবেষণা মতে, স্মার্টফোনের অতি ব্যবহারে শিশুর মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুর চিন্তা ও কল্পণাশক্তি ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের রঙিন পর্দার গণ্ডিতে আটকা পড়ে যায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে শিশুরা অপ্রাপ্ত বয়সেই না বুঝে বিভিন্ন অনৈতিক ও আপত্তিকর বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়। সহজেই এ বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়াতে তারা এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে। এ কারণে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্ত শিশু ও তরুণদের মাঝে নৈতিকতার অভাব ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এ আসক্তির ফলে খিটখিটে মেজাজ ও একঘেয়েমী কাজ করে।

শিশুদের বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা দেখা দেয়। বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া স্কুলের রেজাল্ট দিনদিন খারাপ হতে থাকে।  প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ফেসবুকের এই যুগে তা যেনো আরও বেড়ে চলেছে। ফেসবুকের নেশা।

মনোবিজ্ঞানীরা এই  নেশাকে ‘ডিজিটাল কোকেন’ নাম দিয়েছেন। আর এই ডিজিটাল কোকেনের নেশায় আসক্তির শিকার আজ ধনী-গরিব নির্বিশেষে হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণসহ প্রায় সব বয়সী মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য হলো, ২০১০ সাল থেকে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের বিষণ্নতায় ভোগা ও আত্মহত্যা-প্রবণতা বেড়ে গেছে। কিশোরীদের ক্ষেত্রে এ হার তুলনামূলক বেশি। পরবর্তী ৫ বছরে যা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৬৫ ভাগে। আর বিষণ্নতায় ভোগার হার বেড়েছে ৩৩ ভাগ।

গবেষকদের মতে, এজন্য দায়ী স্মার্টফোন ও প্রযুক্তিপণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহার। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার বাস্তব জীবন থেকে আলাদা করে ফেলতে পারে। প্রযুক্তি আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনটা যেন ক্ষতিকর পর্যায়ে নিয়ে না যায়। প্রযুক্তি কি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে ? না আমরা প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবো ?

অবশেষে বলবো আজকের শিশু-কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খোলা মাঠে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা করুন। শহরের বাস্তবতায় সে সুযোগ কম তাই বলে কি তাদের শৈশবের দুরন্তপনা থেমে যাবে। বাবা-মার সাথে দূরত্বের কারণে সন্তান ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। তাই তাকে সময় দিতে হবে। জাতির স্বার্থে তাই তাদের অধপতনের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে হলে শিশু-কিশোরদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে চলা সম্ভব নয়। কিন্তু এর সাথে সাথে আমাদের শিশুদের কীভাবে সামাজিক হওয়া যায়, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, খেলাধুলা করা, তাদের নানারকম গুণ আমাদেরই বের করে আনতে হবে।

লেখক- আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

About esheba

All service together. It's the main thing to publish online fb page e-sheba. if you search anything to get our online website https://www.e-sheba.com.

Check Also

এতদিনের পরিচিত টেক ইন্ডাস্ট্রি কি বদলে যাচ্ছে মহামারির প্রভাবে?

করোনাভাইরাসের প্রকোপ যে শুধু আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে পড়েছে তা-ই নয়, একইসাথে এই ভাইরাস পুরো বিশ্বের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *