জেনে নিন হোস্টিং এর প্রকারভেদ, সুবিধা-অসুবিধা এবং সার্ভার বানানোর জন্য দরকারী জিনিস সম্পর্কে
ধরুন অাপনার একটি কম্পিউটার অাছে, অাপনি এটি ভাড়া দিতে চান । অর্থাৎ তো অাপনি এটা একজন কে ভাড়া দিলেন মানে পুরো কম্পিউটার টাই ভাড়া দিয়ে দিলেন । এর মানে এখন এটা যদি সার্ভারের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেন তাহলে সে অাপনার থেকে ডেডিকেটেড সার্ভার কিনেছে । এখন যিনি ক্রয় করেছে অাপনার থেকে তিনি দেখলেন তার পিসিতে অনেক স্পেস, র্যাম এবং সিপিউ রিসোর্স অব্যবহৃত পরে অাছে । সুতরাং সে চিন্তা করলো এই অব্যবহৃত রিসোর্স অারো কয়েক জনের কাছে বিক্রি করবে । সুতরাং সে ভার্চুয়াল কিছু সিস্টেম তৈরী করলো । অাপনারা অনেকেই VMWare কিংবা Virtual Box ব্যবহার করে একই পিসিতে একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেছেন কিন্তু ব্যাপার টা এমন । সে ভার্চুয়াল কিছু সিস্টেম বানিয়ে পুরো কম্পিউটার টাকে অনেক গুলো ভাগে ভাগ করে ফেললো । প্রতিটা ভাগে ইচ্ছা মত র্যাম, সিপিইউ দিয়ে দিল । এখন যারা তার থেকে এই ভাগ গুলো কিনছে তারা হলো VPS কিনছে অর্থাৎ Virtual Private Server ক্রয় করছে । এটি কয়েক ধরনের অাছে, যেমন: openvz, xen server, kvm ইত্যাদি । তবে প্রধানত দুইরকম:
১. ডেডিকেটেড রিসোর্স
২. শেয়ারড রিসোর্স
ধরুন মেইন পিসি তে ১০ জিবি র্যাম অাছে । অাপনি সবাইকে ১জিবি করে র্যাম দিলেন, কিন্তু অনেকের ১জিবি র্যামের প্রয়োজন নেই অাবার অনেকের ১জিবির বেশী প্রয়োজন । সুতরাং শেয়াড ভিপিএস এ রিসোর্স শেয়ারর্ড হবে । অর্থাৎ অাপনার ব্যবহার এর পর যদি রিসোর্স ফাকা থাকে তবে তা অন্য রা ব্যবহার করতে পারবে । এর প্রধান অসুবিধা হলো অাপনি ২জিবি র্যাম কিনলেও পরিপূর্ন ২জিবি পাবেন না কম কিংবা বেশী পাবেন । যেমন : OpenVZ VPS
অার ডেডিকেটেড ভিপিএস এ অাপনাকে যা দেওয়া হবে তাই ই অাপনি পাবেন অন্যরা এতে ভাগ পাবে না কিংবা অাপনি অন্যদের টার ভাগ পাবেন না । যেমন: KVM VPS
এবার ধরুন কেউ একটা ভিপিএস কিনলো, কিন্তু দেখলো তার ভিপিএস এ দেওয়া জায়গার দরকার হচ্ছে না তার অারো কম রিসোর্সেই চলছে । তখন সে ভিপিএস কে অারো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে নিলো । অার এগুলোই হলো শেয়ার্ড হোস্টিং , দাম কম এর জন্য পৃথিবীতে এটিই বেশী পরিমানে বিক্রি হয় ।
অারো কিছু টার্ম:
প্রোভাইডার: যাদের নিজেদের ডেটাসেন্টার অাছে এবং বিক্রি করে ।
রিসেলার: যারা প্রোভাইডার থেকে সার্ভিস কিনে তা সাধারন ইউজারদের কাছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগ করে বিক্রি করে ।
অাপনি কি ধরনের সার্ভিস নিবেন?
খুবই জটিল একটা প্রশ্ন এটা, এক এক জন এর উত্তর এক একভাবে দিবে কিন্তু অামি নিচের মত করে দিবো:
১. পার্সোনাল ব্লগ, ছোট খাট নিউজ, খুবই ছোট খাট ই-কমার্স সাইট, ছোটখাট কর্পোরেট সাইট যাতে সেন্সিটিভ ডেটা অাদান প্রদান হবেনা কোনো এ ধরনের সাইট এর জন্য শেয়ারড হোস্টিং বেস্ট । দাম কম, রিসোর্স কম 😉
২. মোটামুটি বড় সাইট যাতে প্রতিদিন ৩০-৫০ হাজার ভিজিটর ঢুকে, কর্পোরেট সাইট যাতে অনেক ভিজিটর প্রবেশ করে কিন্তু সেন্সিটিভ কিছু করে না নরমাল কাজ করে, মাঝারী সাইজের ইকমার্স সাইট, নিউজ সাইট কিংবা যেকোনো সাইট যাতে ইমেইল কিংবা অন্যান্য লিমিটেশান চান না তারা ভিপিএস নিবেন ।
৩. বড় সাইট, কিংবা সেন্সিটিভ তথ্য অাদান প্রদান হয় এমন সাইটগুলোর জন্য ডেডিকেটেড নিতে হবে ।
৪. যারা ব্যবসা করতে চান হোস্টিং এর তারা রিসেলার হোস্টিং নিবেন কিংবা ভিপিএস নিতে পারেন , ক্লাইন্ট বাড়লে ডেডিকেটেড নিবেন ।
ডেটাসেন্টার তৈরীর জন্য কি কি দরকার?
১. হার্ডওয়্যার:
প্রোসেসর: এটা প্রয়োজন অনুযায়ী নিতে হবে তবে বিজনেস করার জন্য xeon e3 duel কিংবা xeon e5 টা অনেক বেশী ব্যবহৃত হয় । তবে চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো পিসি কেই ব্যবহার করা সম্ভব ।
র্যাম: নূন্যতম ৮ জিবি
হার্ডডিস্ক : এসএসডি ( মাস্ট ) যে কোনো সাইজ চাহিদা অনুযায়ী
নেটওয়ার্ক লাইন: মিনিমাম ৩০ এম্বিপিএস, তবে ৫০ কিংবা ১০০ নেওয়া উচিত যদি একটু বড় সার্ভার হয় তাহলে । অার অবশ্যই ব্যাকঅাপ নেটওয়ার্ক লাইন, রিডানডেন্ট করে রাখতে হবে যাতে নেটওয়ার্ক ফেইলার এড়ানো যায় ।
পা্ওয়ার সাপ্লাই: অবশ্যই ব্যাকঅাপ হিসাবে ইউপিএস এবং জেনারেটর কিংবা অন্য কিছু রাখতে হবে ।
২. সফটওয়্যার:
সিপ্যানেল : ভিপিএসএর জন্য ২০০ ডলার বা ১৬০০০ টাকা বছরে এবং ডেডিকেটেড এর জন্য অাপনাকে ৪০০ ডলার বা বছরে ৩২০০০ টাকা দিতে হবে ।
এছাড়াও ভিপিএস তৈরীজন্য বিভিন্ন কন্ট্রোল প্যানেল কিনতে হতে পারে যদিও ফ্রিতে পাওয়া যায় কিছু যেমন: openvz প্যানেল তবে প্রোফেশনাল কাজের জন্য কিনতে হবে যার জন্য মাসে ৯-২০ ডলার দিতে হবে । এর বাহিরে নানবিধ খরচ অাছে অারো, যেমন softacolous, whmcs এসব কেনা ।
যাইহোক, প্রোভাইডার হওয়া খুবই কঠিন বিষয় কারন সার্ভার মেইনটেনেন্স করা খুবই কঠিন । টাকা থাকলেই সার্ভার বানিয়ে বিক্রি করতে পারবেন এটা ভাবা বোকামী । একটা সার্ভার বানিয়ে বিক্রি করতে হলে অবশ্যই এতে এক্সপার্ট হতে হবে । ভালো হয় কারো থেকে কিনে ব্যবহার করা, এতে খরচও কম পরবে অার মেইনটেনেন্স নিয়ে ভাবতে হবে না অাগামি পর্বে অারো বিস্তারিত জানবো কিভাবে সার্ভার বানাতে হবে তার উপর ।
সবাইকে ধন্যবাদ
লিখেছেন:
মো: জোবায়ের অালম
ফাউন্ডার, গ্রিনওয়েব বাংলাদেশ লিমিটেড ।